Description
দিনগত পাপক্ষয়ে ডেলিপাষণ্ড জীবনে পেন্ডুলাম বনে গেছি এবং তা কোলাঘাট ও কলকাতার মধ্যে জটিল দোলগতিতে বহু কষ্টে দোল খায় এবং খেতেই থাকে। বাহ্যিক আবরণ দেখে অনেকেই ক্যালকেশিয়ান ভাবে। সত্যি বলছি আমার বাড়িতে অ্যালসেশিয়ান নেই। দিনের শেষে আমার ঠিকানা মেদিনী-মায়ায় ঘেরা রাইন গ্রাম। অনেকেই মুখ ফসকে বলে ফেলে তোকে তো ‘টুম্পা’ মনে হয় না। উত্তরে আমি জোরের সঙ্গেই বলি আমি ‘টুম্পা’ই। টুম্পাকে আর বিস্তারিত করলাম না। গত শতাব্দীতে যাদের জন্ম, তাদের অধিকাংশ হৃদয়ে অখণ্ড মেদিনীপুর প্রবলভাবে রাজত্ব করছে। আমার মতো অনেকেরই হৃদয়ে তিন মেদিনীপুর এক হলেও, প্রশাসনিক বাস্তবতাকে না মেনে উপায় নেই। তাই পূর্ব, পশ্চিম ও ঝাড়গ্রাম। কবিতা সময় ও স্থানকে অক্ষ করে এগিয়ে যায়। তার লেখচিত্রে স্থানাঙ্ক-সমাধান পেতে আজীবন ভ্রমণ লাগে। কবি ও কবিতার সঙ্গ লাগে। পারস্পরিক বোঝাপড়া লাগে। হৃদয়ের তাপ-উত্তাপ বিনিময় লাগে।
এইসব হৃদয়ঘটিত বিষয়াদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি বলে মনেই হয় না। পূর্ব মেদিনীপুরকেন্দ্রিক সৃজনশীল মানুষজন, যাদের অধিকাংশই কবি তাঁদেরকে উৎসর্গ করে আগেই প্রকাশিত হয়েছে ‘পূর্বপ্রীতি’। সেখানেও ব্যক্তিক সীমাবদ্ধতা ও অনিচ্ছাকৃত অজ্ঞতার কারণে আমার প্রিয় ও পরিচিত অনেকেই অনুপস্থিত। জানি না কাব্যগ্রন্থের নাম ‘পশ্চিমী প্রেম’ থেকে কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছে কিনা। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার অনেক লিখিয়ের সঙ্গেই আমার শ্রদ্ধা ও শাসনের সম্পর্ক, সখ্য ও স্নেহের সম্পর্ক। যাঁরা পরিচিতির পরিধির মধ্যে আছেন, তাঁদের কবিতায়িত করতে গিয়ে আগের তিক্ত অভিজ্ঞতাই বড়ো হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেখছি সিন্ধু থেকে বিন্দু তুলতেও পারিনি। অনেকেই অনুপস্থিত থেকে গেছেন। অনিচ্ছাকৃত এই দায় নিজের মাথায় তুলে নিয়ে কবিতার পথে হাঁটি।
গুরুত্বপূর্ণ অনুপস্থিতি সবসময় অক্ষমতার কথা, দুর্বলতার কথা মনে করিয়ে দেয় এবং ছুটিয়ে বেড়ায় অতীতের রেখে যাওয়া পথ থেকে শুরু করে আগামীর পথের নেশায়। আগামী মানেই আলো। জীবনের কথা যেহেতু শেষ হওয়ার নয়, কবিতার কথা চলতেই থাকবে ভাষায় ধ্বনিতে ভাবে অর্থে…।