Description
সুপ্রাচীন কাল থেকে নদনদী মানবজীবনের চালিকাশক্তি। নদনদী যে-কোনো দেশের প্রাণ। বঙ্গদেশ, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য এ কথা চাঁদ-সূর্যের মতো ধ্রুব। নদনদীও তার প্রাণপ্রাচুর্যে দারুণভাবে বৈচিত্রময় ও প্রবলভাবে সম্পদশালী। কত অজস্র নদী যে এই প্রিয়ভূমীজুড়ে বিস্তৃত, তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ছোটোবড়ো যেসব নদী জালের মতো বিছিয়ে আছে আমাদের প্রিয় স্বদেশে, তার কোনোটি প্রমত্তা, কোনোটি স্রোতস্বিনী, কোনোটি আবার মৃদুলা, অর্থাৎ, মন্থরগতির।
কী বিচিত্র সব তাদের নাম! কত বৈচিত্রময় তাদের গতিপথ! যেমন: উদাহরণস্বরূপ, গঙ্গা, ভাগীরথী, হুগলি, আদিগঙ্গা, কংসাবতী, সুবর্ণরেখা, দামোদর, জলঙ্গী, সরস্বতী, মাতলা, বিদ্যাধরী, ইছামতি প্রভৃতি। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ নদীকে নিজের মতোই ভালোবাসেন; তাঁরা অবসরে নদী নিয়ে ভাবেন, নদী রক্ষার জন্য কাজ করেন। তাঁদের এই ভালোবাসা সহজাত। বইটির প্রথম অধ্যায় থেকে শুরু করে শেষ অধ্যায় পর্যন্ত গভীরভাবে পাঠ করলে নদীর যে ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে তা মানুষের কাছে অপরিসীম। নদী ভৌগোলিক অবস্থান থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিশাল ভূমিকা গ্রহণ করে আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
একথা বলা যায় মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক হল নদী। বইটিতে লেখক তার গবেষণার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের নদীর সার্বিক বিবরণ, নদীকে কেন্দ্র করে যে জনপদ গড়ে উঠেছে তার বর্ণনা, অর্থনৈতিক বিকাশ কীভাবে সমৃদ্ধ করেছে তার বিবরণ এবং পশ্চিমবঙ্গের নদীবক্ষে বিভিন্ন জলযানের এবং নদীকে কেন্দ্র করে এই সব এলাকার সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ধারণের বর্ণনা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। এককথায় বলা যায়, বইটি নদীকেন্দ্রিক ঐতিহাসিক দলিল।
বইটি পড়ে পাঠকগণ কৃতার্থ হলে লেখকের (কৃষ্ণ সরকার) পরিশ্রম ও উদ্দেশ্য সার্থক ও সুন্দর হবে।
অধ্যাপক (ড.:) প্রকাশ বিশ্বাস
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়